Saturday, March 24, 2007
নিঃশব্দ (nishabd)-২০০৭
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে না এইটা বেশ বুঝতে পারলাম তথাকথিত ইনডিয়ান লোলিটা নিঃশব্দ দেখে। দুধের স্বাদ দুধে, ঘোলের স্বাদ ঘোলেই মেটাতে হয়। প্রথম যখন শুনেছিলাম রামগোপাল ভার্মা একটা সিনেমা তৈরি করছেন যা নাকি সামথিং লাইক লোলিটা হবে, তখনই মনে প্রশ্ন উঠেছিল, ইজ ইট পসিবল ইন ইনডিয়া? তাছাড়া ভূতের সিনেমা করে বিখ্যাত হওয়া রামগোপাল লোলিটার মতো বাঘা আইডিয়া নিয়ে সিরিয়াস কাজ করবেন কেমন করে?
লোলিটা বোধহয় সাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র। এর গল্পটাও বাঘা সাহিত্যিকের,ভ্লাদিমির নবোকভের। এরকম প্যাশনদার গল্প খুব কমই আছে। তদুপরি ইনসেসটাস অবৈধ সম্পর্কের কথা। এ জিনিস নিয়ে সেই চল্লিশের দশক থেকে বিতর্ক চলছে তো চলছেই। আমার ভাগ্য ভাল, প্রথ ম দফা স্টানলি কুব্রিকের লোলিটাই দেখেছিলাম। আরও ভাগ্য যে, সে সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন স্বয়ং ভ্লাদিমির নবোকভ। সিনেমাটি সাদাকালো। কিন্তু তাতে কি ১৯৬২ তে বানানো ওই ছবিটাতেই বাধভাঙা প্যাশনের অবৈধ রঙগুলো সবচেয়ে বেশি ফুটিতে তোলা গিয়েছিল।
এর পর দেখলাম ১৯৯৭তে আদ্রিয়ান লেইনের বানানো লোলিটা। সম্পূর্ণ রঙিন। তবে চিন্তা একটু কম । প্যাশনটা সরাসরি দেখানোর প্রবণতা বেশি।
এর মধ্যে সিনেমার ইতিহাসে লোলিটা নামে অনেক নায়িকা এসেছে। কখনো দৈবাৎ কখনো নবোকভের আইডিয়ার সাজেশন হিসাবে। মনে আছে, আদ্রিয়ান লেইনের মুভিটা দেখার পর একটা গল্প লিখেছিলাম ২০০৪-এ। লোলিতা রিলোডেড। সেও এক প্যাশনের গল্প।
বেশ এইসব মাথায় থাকলে নিঃশব্দ ভাল লাগার কথা না। সারাক্ষণ নীলের আধিপত্য দিয়ে রামগোপাল অবৈধ, বাধভাঙা ব্যাপারের সাজেশন হয়তো দিতে চেয়েছেন। কিন্তু ওই নির্জন পাহাড়ি এলাকায়ও ইনডিয়ান মূল্যবোধ সমাজ সংসার হাজির করে রীতিমতো একটা নীতিকথার আসর বসিয়ে ফেলেছেন। সৎ বাপ তো দূরের কথা বান্ধবীর বাপের সঙ্গে প্রেমটাও তাই জমলো না। বাধ যদি নাই ভাঙবে তবে আর খামাখা লোলিটাকে টেনে আনা কেন?
কিন্তু এইটুকুতেই ইনডিয়ান সমাজের মাথায় গরম পানি পড়েছে। বিতর্ক চলছে। অমিতাভ কি করে এই অভিনয় করে হানি ঘটালেন এ নিয়েও কথা বার্তার শেষ নেই। অনেকে এই বিতর্কের জোরে কিংবা বিজ্ঞাপনের জোরেও দেখছেন বটে। কিন্তু আমি হতাশ।
রামুজিসে বারে মে ফিরছে সোসনা পড়েগা!
নেমসেক বিষয়ে মিরা নায়ার
সালাম বম্বে ও মুনসুন ওয়েডিং খ্যাত পরিচালক মিরা নায়ার এবার তৈরি করলেন নেমসেক। বাঙালি বংশোদ্ভূত লেখক ঝুম্পা লাহিড়ি এ উপন্যাসটির জন্যই পুলিটজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এতে আছে কলকাতা থেকে নিউ ইয়র্কে মাইগ্রেট করা দম্পতি আশোক ও অসীমার কাহিনী। আমেরিকান ডৃমের স্বপ্নে ৩০ বছর পার করার পরও এ দম্পতির জীবনে পুরনো মূল্যবোধ ও নতুন পৃথিবীর সংঘর্ষ থেকেই যায়। অন্যদিকে তাদেরই সন্তান গোগোল নিজেকে খুজে পায় আমেরিকান আইডেন্টিটির ভেতর। ইরফান খান, টাবু, কাল পেন অভিনীত মুভিটি ইতিমধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। মুভি নিয়ে নিউজউইক ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছেন মিরা নায়ার।
নেমসেক কি নিয়ে তৈরি?
এটা মা ও ছেলের কাহিনী। আমারও একটি টিনএজ ছেলে আছে। আমি নিজের অভিজ্ঞতাকেই মুভিতে রূপায়িত করেছি। কিন্তু যে জিনিসটা আমাকে মুভি তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছে তা হলো বঞ্চনা। এমন একটি দেশে বাবা-মাকে হারানো যা সম্পূর্ণ নিজের নয়। প্রথম বারের মতো মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করা।
এটা বাড়ির গল্পও। আপনার নিজের বাড়িটা কোথায়? আপনার তো দিল্লি, নিউ ইয়র্ক, আফৃকায়... বাড়ি আছে।
নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর বিলাসের মধ্যে কিছু সুবিধা আছে। আমার বাড়ি সেখানেই যেখানে আমার পরিবার থাকে। আমি বাড়ি বানিয়েছি বসবাসের জন্য, খোলা জায়গায় নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য আর আশ্রয়ের জন্য। আমরা ম্যানহাটানে থাকি। আমার ছেলের স্কুল শেষ হলে আমরা ইউগান্ডার কামপালা যাই, সেখানে তিন মাস থাকি। একইভাবে আমার মুভি ও পরিবার প্রতি বছর আমাকে ইনডিয়ায় নিয়ে যায়। শুরুতে এক জায়গার জন্য আরেক জায়গা ছাড়ার ব্যাপারটা আমার জন্য বিভ্রান্তিকর ছিল। কিন্তু আমি এ বিভ্রান্তিটা মুভিতে ব্যবহার করার পর দেখলাম জীবনের অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমার যা নেই তার জন্য আমি এখন হা হুতাশ করি না। আমি প্রত্যেক জায়গায়ই পরিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে শুরু করেছি।
সিনেমাটি নিয়ে আপনার কি স্বপ্ন ছিল?
আমি একটি গভীর ও অপূর্ব প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমকাহিনী বানাতে চেয়েছি। গোগোলের বাবা-মার প্রেম কাহিনী এমনই যে, আমি সচরাচর এ রকম দেখি না। এটা নীরবতার গল্প। কিচেন টেবিলে এক কাপ চা দু’জনে শেয়ার করা, পরস্পরকে দেখার গল্প। সঙ্গ কাকে বলে ও অংশীদারিত্বের কৃৎকৌশল বলতে যা বোঝায় তার কাহিনী। তরুণদের গোলাপ, হিরা, হলমার্কের কার্ড, আই লাভ ইউর ব্যাপার নয়। মুভির দুটি খুটি হলো এ প্রাপ্তবয়স্ক প্রেম আর গোগোলের মানুষ হয়ে ওঠা। এমনকি ম্যানহাটানেও আমি তিন প্রজন্মের সঙ্গে বাস করি। আমার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য আনন্দদায়ক। কিন্তু আমেরিকা নিজেকে বার্ধক্যের প্রজ্ঞা থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছি।
ইনডিয়ান-আমেরিকানদের জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কতোটা বাস্তব?
১৯৭৯ সালে আমি যখন নিউ ইয়র্ক যাই তখন লোকে ইনডিয়া প্রায় চিনতোই না। খুব ভয়ঙ্কর একাকী সময় ছিল সেটা। আমি এখন ইন্টারনেটে কিক করলেই দক্ষিণ এশিয়ান নাট্যকার, পাঠচক্র, ফিল্ম ফেস্টিভাল- সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির পুরো একটা উপরিকাঠমোই দেখতে পাই। ঝুম্পা লাহিড়ি ও আমার জগৎ কসমোপলিটান। আমরা শিল্প, কলেজ নেটওয়ার্ক, প্রতিবাদ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। গোগোলের মাধ্যমে মুভিটিতে কলকাতা ও ম্যানহাটানের সমন্বয় ঘটেছে। সত্তরের দশকের যে কলকাতা আমি ভালোবাসতাম আর ম্যানহাটানের সেই সঙ্গীত, ফ্যাশন, মানুষ যারা রাস্তায়, বারে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার মানে মুভিটি দুই শহরের কাহিনী?
কলকাতা আমার জন্য বিশেষ এক শহর। এ শহরের তিনশ’ মাইল দক্ষিণে আমি বেড়ে উঠেছি। গ্রীষ্মের ছুটিগুলো সেখানে কাটিয়েছি। আমি পরে যা হয়েছি তার অনেক কিছুই সেখানে শেখা। সেখানেই আমি প্রথম রাজনৈতিক পথনাটক পেয়েছি। প্রথম মুভি দেখেছি। মহান বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের দেখা পেয়েছি। ১৮ বছর বয়সে আমি ক্যামবৃজে এসেছি যেখানে নেমসেকের সূচনা। তারপর আমি নিউ ইয়র্কে গিয়েছি। মুভিটি ওই দুই শহর নিয়ে যেখানে আমি শিখেছি, বড় হয়েছি আর দেখেছি। আমি এ দুই শহরকে এমনভাবে চলচ্চিত্রায়িত করেছি যেন সেগুলো একটা শহর। কারণ আমি বিশ্বাস করি, কলকাতা আর ম্যানহাটানের মধ্যে অনেক মিল আছে। এটাই হলো বয়নের সূত্র। দর্শককে ধারণা দেয়া যে, দুই পৃথিবীতে বাস করাটা কেমন হতে পারে। কখনো কখনো আমরা জানি না, আমরা নিউ ইয়র্ক না কলকাতায় আছি।
(সংক্ষেপিত)
অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ
Saturday, March 10, 2007
ব্রিফ ক্রসিং (২০০১)
ফরাসি পরিচালক ক্যাথেরিন ব্রেইলার সিনেমা ব্রিফ ক্রসিং। সিনোমটি দেখে কিঞ্চিত উত্তেজিত হয়েছিলাম। পরে জানতে পেরেছিলাম পরিচালক কিঞ্চিত বিতর্কিত আছেন। এইটা ছোট এক প্রেম কাহিনী। ব্রিফ। আশি মিনিটের। কিন্তু একটুও পলক ফেলার উপায় নাই। কাহিনী তৈরি হয়েছে ডেভিড লিনের উপন্যাস ব্রিফ এনকাউন্টার থেকে। কাহিনী এক রাতের। জাহাজে দেখা হয় ত্রিশোত্তর এক ইংলিশ নারী এলিসের সঙ্গে দেখা হয় ১৬ বছরের ফ্রেঞ্চ স্কুল বয় থমাসের। পরিচয় ও আলাপ চলে। গাঢ় হয়ে ওঠে সম্পর্ক। স্রেফ এক রাতের ব্যাপার। এলিস বলে, সে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ফিরছে। তার মনে দুঃখ। আর সেক্স ও সম্পর্ক বিষয়ে সে মুক্তমনা। অমুক তমুক। থমাস তার বক্তব্যে উৎসাহী হয়। সে তখনো সে ভার্জিন। টিনেজ বেলায় যেমন হয়, সে সিরিয়াসলি প্রেমে পড়ে। রাতে তাদের মধ্যে সেক্সুয়াল এনকাউন্টার হয়। সকালে থমাসের জন্য অপেক্ষা করবে বলেও অপেক্ষা না করে চলে যায় এলিস। দৌড়াতে দৌড়াতে থমাস শেষ পর্যন্ত এলিসের গাড়ি পর্যন্ত যায় সে। তাকে নিতে এসেছে তার স্বামী। কোলে তার সন্তান। থমাসের দিকে ফাঁকা দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু তার দিকে চোখ পড়ে না। অবাক কাণ্ড। থমাস ভীষণ আহত অবস্থায় বেদনার্ত হয়ে ওঠে। এটাই যেন ব্রিফ এনকাউন্টার বিটুইন লাভ অ্যান্ড সেক্স।
Thursday, March 8, 2007
ভগম ভগ (২০০৬)
মালায়লম সিনেমা রামজি রাও স্পিকিং থেকে হিন্দি সিনেমা হেরা ফেরি তৈরি হয়েছিল। রামজি রাও স্পিকিং-এর সিকোয়েল মান্নার মাথাই স্পিকিং। সেই মান্নার মাথাই স্পিকিং-এর রিমেক হলো ভগম ভগ। ফলে, ভগম ভগ হলো সম্পর্কে ফির হেরা ফেরির চাচাতো ভাইয়ের মামাতো বোনের ননদের ভাশুর। বলাবাহুল্য এইটাও কমেডি মুভি। পরেশ রাওয়াল একটা থিয়েটার চালান। সেইখানে অক্ষয় আর গোবিন্দ নায়িকার ডিস্টার্ব নষ্ট করে। তাই নায়িকা ভেগে যায়। কিন্তু দলকে লন্ডনে শো করতে হবে। সেখানে গিয়ে নায়কদের নায়িকা খুঁজে বের করতে হবে। নায়িকা খুড়তে গিয়ে তারা এক সাপের খোড়ল খুঁজে পায়। আর যায় কোথায়? সিরিয়াস আবহে কিঞ্চিত কম্মেডি। অত হংস করা গেল না বটে, তবে সাঁতার মোটামোটি কাটা গেল। পরিচালক প্রিয়দর্শন। আর মূল লড়কি লারা দত্ত।
রাজকুমার সন্তোষীর চায়না গেট (১৯৯৮)
চায়না গেট নামে হলিউডে ১৯৫৭ সালে একটা মুভি তৈরি হয়েছিল। পরিচালনা করেছিলেন সামুয়েল ফুলার। এই চবি নিয়া আমি কিছু জানি না। কারণ দেখি নাই সেটি। তবে রাজকুমার সন্তোষীর চায়না গেট দেখলাম সম্প্রতি, এগেইন। উর্মিলা মার্তণ্ডকারের ছাম্মা ছাম্মা গানের গগনবিদারী অ্যাপিল যে মোলাঁ রুজকেও প্রভাবিত করেছিল তা জানা ছিল না। জানলাম উইকিপিডিয়া ঘেটে। এই গানটা তো আসলে আইটেম সঙ। মানে স্রেফ উর্মিলার উপস্থিতির জন্যই। উর্মিলা ছাড়াও ছিলেন এককালের কুল বলিউডি আইটেম মমতা কুলকার্নি। না, হট নন তিনি চায়না গেটে বেশ কুলই ছিলেন।
অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, অমরেশ পুরি, পরেশ রাওয়াল, ড্যানি ডেনজঙপাসহ হাই প্রোফাইল অনেক বলিউড অভিনেতা।
পার্বত্য অঞ্চলে এক ছোট একটি অঞ্চলে ডাকারদের ব্যাপক উপদ্রব চলছে। সেখানকার এক ফরেস্ট অফিসারের আমন্ত্রণে ওই জনগোষ্ঠীকে বাচাতে যায় প্রাক্ত আর্মির একটি দল। ডাকাত দলের সঙ্গে লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন নিহত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করে তারা। এক সময়ের সুপার হিট এই মুভিটি নিয়ে রিলিজ হওয়ার সময় কে কী বলেছিলেন জানি না। কিন্তু এই মুভিটা একটি বিখ্যাত মুভির আদলে তৈরি। সেট, গল্প এবং মেকিং সহ সেই মুভির ব্যাপক প্রভাব আছে এতে। সেটা স্বীকার করা হয়েছিল কিনা তাও আমি জানি না। সেই বিখ্যাত মুভিটির নাম সেভেন সামুরাই। আকিরা কুরোশাওয়া পরিচালিত মুভি। ওই মুভিটিতে সাতজন সামুরাই যোদ্ধা ডাকাত অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলের এক জাতিগোষ্ঠীকে বাঁচাতে গিয়েছিল। সেখানকার এক তরুণীর প্রেমে পড়েছিল সামুরাই দলের তরুণতম যোদ্ধা। নিহত হয়েছিল কয়েকজন সামুরাই। আর নেমে ছিল এক অক্লান্ত বৃষ্টি।
চায়না গেট দেখে বারবার আমার সেভেন সামুরাইয়ের কথাই মনে পড়ছিল। থ্যাঙ্কস টু কুরোশাওয়া। হিন্দি পপ মুভিকেও কী দারুণ প্রভাবিত করেছিলেন!
Tuesday, March 6, 2007
লুই মান্দোকির ভোসে ইনোসেনটে (২০০৪)
এক রাতে চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাত স্টার মুভিজে আঙ্গুল থেমে গেল। গভীর রাতে ইংরেজি ছড়া অন্যভাষার ফিল্মগুলো মোটামুটি বিজ্ঞাপনের ঝামেলা ছাড়াই দেখা যায়। কিন্তু একটা অসুবিধা হচ্ছিল। বিজ্ঞাপন বিরতি নেই তাই হয়তো সিনেমাটার নামও দেখা হলো না। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম সিনেমাটা ভাল। নামে কি বা আসে যায়? ডিরেক্টিং স্টাইলও আমার পরিচিত না। অভিনেতা অভিনেত্রীদেরকেও চিনি না। ভাবলাম, পরে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে নিশ্চয়ই জানা যাবে। সিনেমায় একটা চরিত্রের নাম ছিল চাভা। চাভার মার নাম কেলা। চাভা আর কেলা সার্চ দিয়ে পেয়ে গেলাম সিনেমার নাম ও ডিটেইল। স্পানিশ ভাষার এই সিনেমাটির ডিরেক্টর মেক্সিকান পরিচালক লুই মান্দোকি। মান্দোকির আরও কয়েকটি বিখ্যাত মুভির পরিচালক। মেসেজ ইন এ বোটল, হোয়েন এ ম্যান লাভস এ উওমেন তার মুভি। বলাবাহুল্য এইগুলা এখনও দেখা হয় নাই।
ভোসে ইনোসেনটে অর্থ ইনোসেন্ট ভয়েস।এটি তৈরি হয়েছে অস্কার টোরের শৈশবের অভিজ্ঞতার আলোকে। প্রেক্ষাপট ১৯৮০'র দশকের এল সালভাদর। সেখানকার শহরতলীর ১১ বছর বয়স্ক এক বাচ্চা চাভা। স্কুল ছাত্র। সিভিল ওয়ার চলছে। বাবা হারা পরিবারে চাভাই কর্তা। কাজ করে স্কুলে পড়ে। আর এমার্জেনসির মধ্যে যাপন করে দুঃসহ শৈশব। হঠাত গোলাগুলি। হঠাত আক্রমণ। স্কুলে আর্মি রেইড দিয়ে চাভার বয়সী ছেলের ধরে নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে আর্মিতে ভর্তি করে। চাভার মূল সংগ্রাম হয়ে পড়ে যুদ্ধ এড়িয়ে নিজের শৈশবকে পাহারা দেয়া। এক সময় সকল কৌশল ব্যর্থহবার জোগাড় হয়। আর্মির হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চাভা ও তার বন্ধুরা ভাবে, আর্মিতে যাওয়ার চেয়ে গেরিলা দলে যাওয়াই ভাল। গভীর রাতে গেরিলা ক্যাম্পে যায় তারা। ওই রাতেই রেইড হলে ধরা পড়ে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আকিস্মক গেরিলা আক্রমণে বেঁচে যায় চাভা। বাড়ি ফিরে দেখে পুরো গ্রাম পুড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই মার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি লুকিয়ে তাকে আমেরিকা পাঠাবার ব্যবস্থা করেন।
সিনেমাটিতে এল সালভাদরের বিপন্ন অবস্থা, মানুষের অসহায়ত্ব, চার্চের এক ফাদারের সঙ্গে গেরিলাদের সম্পর্ক, শৈশবের প্রেম এত সূচারুভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে অবাক হতে হয়।
এই গৃহযুদ্ধ চলেছিল ১২ বছর।
কী অসহনীয় যে ওইসব গৃহযুদ্ধ!
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ (২০০৫)
মেলাদিন সিনেমা দেখা হয় না। ডেইলি রুটিন একটু এলোমেলো হওয়ায় সিনেমা দেখা কমে গেছে। এর মধ্যে দেখলাম মি. অ্যান্ড মিসেস স্মিথ।
দাম্পত্য যুদ্ধের মুভি। অভিনয় করেছেন ব্রাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। জন স্মিথ ও জেন স্মিথ। বলা হয় এই মুভিতে অভিনয় করার সময় তারা ব্রাড ও জোলি ইশকে ফেঁসে গিয়েছিলেন। যার ফল হিসাবে গত বছর একখানা বাচ্চাও জন্ম দিয়েছেন তারা।
মি. অ্যান্ড মিসেস স্মিথ ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনে জানতে পারেনি তার স্বামী বা স্ত্রী সেক্রেট এজেন্ট হিসাবে কাজ করে বা গুপ্ত হত্যা অভিযানে তারা দুজনেই দক্ষ যোদ্ধা। কিন্তু ম্যারেজ কাউনসেলিং-এর সময় ব্যাপারটি বেরিয়ে আসে। বিপক্ষ দুই সংস্থার হয়ে কাজ করতো মি. অ্যান্ড মিসেস স্মিথ। সংস্থা দুটি একে অপরকে হত্যা করার জন্য তাদের দুজনকে নিয়োগ দেয়। শুরু হয় জন বনাম জেন যুদ্ধ। অস্ত্র সজ্জিত হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে পরস্পরের ওপর লাফিয়ে পড়ে। সে এক আশ্চর্য যুদ্ধ। বেডরুম, কিচেন সর্বত্র এক টানটান উত্তেজনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরস্পরের প্রতি আস্থা ফিরে আসে তাদের। এবং যৌথভাবে শত্রুর মোকাবেলা শুরু করে তারা। আর শেষে যা হয়... জয়ী হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।
কিন্তু সিনেমাটি দেখে আমার বারবার একটি সশস্ত্র দাম্পত্য কলহে রক্তপাতহীন টানটান যুদ্ধের আইডিয়াটি বিশেষ পছন্দ হয়েছে। বাকী থাকলো অ্যাকশন। এ আর নতুন কী?
তবে ব্রাড ও জোলির বাচ্চাটা কিন্তু নতুন। যদিও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখিলে পৃথিবীতে শিশুর ন্যায় পুরাতন আর কিছুই নাই।
Monday, March 5, 2007
অক্টোপুসি (১৯৮৩)
জেমস বন্ডের যে সিনেমাগুলো দেখা হয়নি তার মধ্যে অক্টোপুসি অন্যতম। সেদিন হঠাৎ দেখার সুযোগ হলো। সিনেমাটা দেখতে দেখতে একটু শিহরিত হচ্ছিলাম। কোনো রোমান্স, সাসপেন্স, থ্রিল নয়, ভারতের পটভূমিতে অক্টোপুসির কাহিনীর অনেকটা ঘটেছে এটা দেখে ভাল লাগছিল। অক্টোপুসির গল্পটা ইয়ান ফেমিং লিখেছিলেন ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৬ পর্যন্ত ব্রিটিশ ইনডিয়ার স্মৃতি হয়তো তাকে বিষণ্ন করে তুলতো। ফলে তার নায়ক সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট দুষ্টলোকের পেছন পেছন ইনডিয়ায় চলে এসেছে। আর সে ইনডিয়ার অনেকটাই ব্রিটিশ ইনডিয়া। অর্থাৎ অরিয়েন্টাল ইন্ডিয়া। রহস্যমানবী অক্টোপুসি শাড়ি পরে অভিনয় করছেন। তার দলের সদস্যরাও মোটামুটি নিজেদের সাজ পোশাকে অরিয়েন্টাল ভাবধারা সাঙ্গ করেছেন।
আফগান রাজপুত্র, ভারতীয় ভিলেন আর সোভিয়েত সামরিক কর্মকর্তা বিরুদ্ধে জেমস বন্ড আর অক্টোপুসি। মাঝখানে তাদের পেয়ার মহব্বত।
ভিলেনরা আনবিক বোমা ফোটাবে আমেরিকান মিলিটারি বেসে। জেমস বন্ড প্রতিহত করলো সে অভিযান। আর সুখে শান্তিতে মৌজ করতে থাকলো।
সে তো পুরনো কাহিনী। কিন্তু জেমস বন্ডের ইনডিয়া সত্যিই ইন্টারেস্টিং।
এই পোস্টটা সামহোয়ার ইন ব্লগে করার পর তিমির বললেন, ইয়ান ফ্লেমিংয়ের কাহিনীতে ইন্ডিয়া প্রসঙ্গ নেই। তার মানে এটি বিশেষভাবে ডিরেক্টরের সৃষ্টি। মুভিটির ডিরেক্টর জন গ্লেন।
পদ্মানদীর মাঝি
এইচএসসি কোর্সে আমাদের পদ্মানদীর মাঝির প্রথম চ্যাপ্টারটা পড়ানো হতো। বাংলাদেশে এইচএসসি পাশ অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি আছেন যারা স্রেফ ওই একটি চ্যাপ্টারকেই পদ্মানদীর মাঝি ভাবেন। ওই চ্যাপ্টারটা পদ্মানদীর মাঝির অংশ বটে, কিন্তু পদ্মানদীর মাঝি না। ইন্টারমেডিয়েটেই উপন্যাসটি পড়ার সুবিধা হয়েছিল আমার। পুতুল নাচের ইতিকথা পড়ার পরও এইটাই আমার প্রিয় উপন্যাস থেকে গিয়েছিল। সুমন চৌধুরী ছাড়া আমার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে আর কেউ পুরো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়েছেন বলে জানি না। ফলে তিনিই বলতে পারবেন মানিকের রচনাবলীর মধ্যে পদ্মানদীর মাঝি, পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য এই তিনটার সঙ্গে আর কোনগুলো এককাতারে বিবেচিত হতে পারে।
উপন্যাসটি পড়ার পর বিশেষ করে একটি বিষয় আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। একটি চরিত্র আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল। চরিত্রটির নাম হোসেন মিয়া। বিষয়টির নাম ময়নাদ্বীপ। অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম আহমদ ছফাকে এই বিষয়টি আলোড়িত ও চিন্তিত করছিল। তিনি বাঙালি মুসলমানের মন বইয়ে এ সংক্রান্ত দারুণ একটা প্রবন্ধ লিখেছেন।
১৯৯৩ সালে যখন পদ্মানদীর মাঝি সিনেমা হলো তখনও ভাল সাহিত্য বনাম সিনেমার সংঘর্ষ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা রাখি না। কুষ্টিয়া শহরে পদ্মানদীর মাঝির বিশাল পোস্টারে চম্পা ও রূপা গাঙ্গুলির মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু এত বছরেও গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই সিনেমাটি দেখা হয়েছিল না। দেখলাম সেদিন। ২০০৭ সালের মার্চে। ভারতের একটা টিভি চ্যানেলে। ডিভিডি কেনার কথাও চিন্তা করলাম দেখার পর। কারণ সিনেমাটা আমার ভাল লেখেছিল।
যতদূর মনে আছে শুটিং-এর সময় গৌতম গোষ বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন সে পদ্মাও নাই সে পদ্মানদীর মাঝিও নাই। কিন্তু তার মধ্যেও তিনি পদ্মানদীর মাঝিকে সার্বিকভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে ফোকাস করেছেন ময়না দ্বীপকে। আমার মতে, মানিকের ফোকাসেও মূলত ময়নাদ্বীপই ছিল। পরিপ্রেক্ষিতের প্রয়োজনে পদ্মাপার, দারিদ্র ইত্যাদি এসেছে। ফলে পদ্মানদীর মাঝি আমার ভাল লেগেছে। উৎপল দ্ত্ত ছাড়া আর কে যে হোসেন মিয়া হতে পারতো? ভাগ্যিস তার মৃত্যুর আগে সিনেমাটা শেষ হয়েছিল।
Sunday, March 4, 2007
মোটর সাইকেল ডায়েরিজ (২০০৪)
২০০২ সালের কোনো এক সকাল বেলা আমি আর গল্পকার প্রশান্ত মৃধা মৌলভীবাজারের শমশেরনগরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলাম। উদ্দেশ্য শুভাশিস সিনহাদের ওখানে রাস উৎসব দেখবো। আমার হাতে ছিল এক কপি মোটর সাইকেল ডায়েরি। আর্নেস্তো চে গুয়েভারার তরুণ বয়সের ভ্রমণ কাহিনী। শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত রাস্তায় টানা পড়ে পুরো বইটা শেষ হলো। একটা ঘোর আমাকে ঘিরে ধরেছিল তাৎণিকভাবে। ভাবছিলাম এই বিপ্লবী আইকনের লাতিন আমেরিকা ভ্রমণের উদ্দাম অভিযানটি শেষ হয়েছিল আমার তখনকার বয়সের আগে। ওই সময়েই তিনি আর্হেন্টিনা, চিলি, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা ভ্রমণ শেষ করে ফেলেছেন। লাতিন আমেরিকার মানুষের স্পিরিটটাকে বুঝতে পেরেছেন। আহা আমরা এখনও বাংলাদেশটাও দেখলাম না। আর্নেস্তো ও আলবার্তোর এই ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ নয়। পরের ইতিহাসের একটি প্রস্তুতিও। বহুবছর এই ডায়েরি ও ভ্রমণ অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে।
বইটি পড়ার বহুদিন পর দেখলাম মোটর সাইকেল ডায়েরিজ মুভিটা। ওয়ালটার স্যালেস পরিচালিত মুভিটা দেখার আগে স্বাভাবিকভাবে আশা করেছিলাম, এটা আমাকে আশাহত করবে। সাধারণত অধিকাংশ বিখ্যাত বইয়ের মুভিরূপের ক্ষেত্রেই তা ঘটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ততোটা আশাহত হইনি, যতটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
আবার ওই বইটার কথা মনে পড়লো মুভিটা দেখে।
Subscribe to:
Posts (Atom)